ঈদ বোনাস হয়নি অর্ধেক শিল্প-কারখানায়

সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে আজ বুধবার থেকে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্ট খাতসহ শিল্প-কারখানা খোলা আছে আরো দুই দিন। অথচ মাত্র দুই দিন সময় থাকলেও এখনো অর্ধেক শিল্প-কারখানায় ঈদের বোনাস হয়নি। তবে শিল্পমালিকরা বলছেন, বাকি যে দুটি দিন রয়েছে তার মধ্যেই প্রায় শতভাগ কারখানায় ঈদ বোনাস হয়ে যাবে। আর মার্চ মাসের বেতন প্রায় বেশির ভাগ কারখানায়ই দেওয়া হয়ে গেছে।

এদিকে গার্মেন্ট খাতের দুই শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোতে এবার বেতন-বোনাস নিয়ে তেমন কোনো সংকট না থাকলেও এই দুই সংগঠনের সদস্যভুক্ত নয়, এমন প্রায় ৫০০ ছোট-মাঝারি গার্মেন্ট কারখানায় বেতন ও বোনাস উভয়ই দেওয়া নিয়ে সংকট রয়েছে। এসব কারখানার কোনোটি বড় কারখানার পোশাক সাব-কন্ট্রাকটিংয়ে কাজ করে, কোনো কারখানা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের পোশাক তৈরি করে, আবার কোনো কারখানা মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের অর্ডারের ভিত্তিতে পোশাক তৈরি করে। 

এ রকম তথ্য জানিয়ে শ্রমিক নেতা বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি তৌহিদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার ঈদ মাসের শেষের দিকে হওয়ায় বেতন নিয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-র সদস্যভুক্ত কারখানায় তেমন কোনো সমস্যা নেই। হাতে গোনা দু-একটি ছাড়া বেশির ভাগ কারখানাতেই মার্চ মাসের বেতন দেওয়া হয়ে গেছে। বড় কিছু গার্মেন্ট মালিক চলতি মাসের ১০ দিনেরও বেতন দিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সুতরাং এবার ঈদের আগে বেতন নিয়ে তেমন কোনো সংকট নেই। তবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য নয় এমন প্রায় ৫০০ গার্মেন্ট কারখানায় বেতন-বোনাস উভয় নিয়েই সংকট রয়েছে। এ ধরনের কারখানা শুধু ঢাকা সিটির মধ্যেই আছে ২০০টির মতো। বাকিগুলো নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাবার ও আশুলিয়া এলাকায়। এসব ছোটা-মাঝারি কারখানায় প্রতিবছরই বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হয়। দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের একেকটি কারখানায় ৩০০ থেকে ৪০০ শ্রমিক কাজ করে। তাদের বেশির ভাগই ঈদ কাটে চোখের পানিতে। কারণ কারো ভাগ্যে বেতন জুটলে বোনাস জোটে না, আবার বোনাস জুটলে বেতন জোটে না। আবার কোনোটিতে বেতন-বোনাস কোনোটিই জোটে না। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-র সদস্যভুক্ত না হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো দায়ও নিতে চান না সংগঠন দুটির নেতারা।’

এই শ্রমিক নেতা আরো বলেন, ‘বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানায় বেতন নিয়ে তেমন কোনো জটিলতা না থাকলেও আমাদের শ্রমিক সংগঠনের কাছে থাকা তথ্যানুযায়ী এখনো অর্ধেক কারখানায় বোনাস দেওয়া হয়নি। তবে আশা করব এখনো যে দুই দিন বাকি রয়েছে তার মধ্যেই দেওয়া হবে।’

অবশ্য শ্রমিক নেতাদের এ তথ্য মানতে নারাজ বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা। বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত বিজিএমইএর ঢাকা ও চট্টগ্রামের সদস্যভুক্ত কারখানার বেতন-বোনাস দেওয়ার পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র উল্লেখ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত চালু কারখানার সংখ্যা দুই হাজার ১৫১টি। এর মধ্যে ঢাকার চালু কারখানা এক হাজার ৮৯৪টি এবং চট্টগ্রামের চালু কারখানা ২৫৭টি। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত মার্চ মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে দুই হাজার ১১২টি কারখানায়। যার হার ৯৮.১৯ শতাংশ। এখনো পর্যন্ত ৩৯টি কারখানায় মার্চ মাসের বেতন দেওয়া হয়নি। গতকাল পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের বোনাস দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৬৭৩ কারখানায়, যার হার ৭৭.৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ এখনো ৪৭৮টি গার্মেন্ট কারখানায় বোনাস দেওয়া হয়নি। আশা করা হচ্ছে, বুধবার ও বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ কারখানাগুলোতেও বোনাস দেওয়া হয়ে যাবে। এ ছাড়া চলতি এপ্রিল মাসের আংশিক বেতন দিয়েছে এক হাজার ৬৫৬টি কারখানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *